Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ভাষা ও সংষ্কৃতি

গৌরনদী উপজেলাটি বরিশাল জেলার প্রবেশ দ্বার । এ উপজেলার ভাষা ও সংস্কৃতি বরিশাল জেলার লোকসাহিত্যের অনুরূপ ।

 

বরিশাল অঞ্চলের লোকসংস্কৃতি এখানকার জনজীবনের হৃদয়বৃত্তিরই অকৃত্রিম অনুভব, যার অকুণ্ঠ প্রকাশ ঘটেছে লোকসাহিত্য, লোকসঙ্গীত, লোকশিল্প আর লোকাচারের বিভিন্ন অনুষঙ্গের মাধ্যমে।

 

নকশি

 

বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানের মতো বরিশালের শিল্পীরাও নকশি শিল্পচর্চায় বিশেষ অবদান রেখেছে। এর কিছু বিবরণ দেওয়া হলো:

ক.নকশি-কাঁথা: বরিশালের নকশি-কাঁথা এখানকার লোকশিল্পের অন্যতম ঐশ্বর্য। এখানকার কাঁথার নকশিতে হিন্দু-মুসলমানের আলাদা বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। মুসলমান মেয়েরা তাদের তৈরি কাঁথায় ফুল, লতা-পাতা, চাঁদ-তারা এবং হিন্দু মেয়েরা তাদের কাঁথায় কীটপতঙ্গ, মাছ, পশুপাখি ও নানা ধরনের সরীসৃপের নকশা তৈরি করে থাকে।

খ. নকশি পিঠা: বরিশালের সর্বত্রই পিঠার যথেষ্ট কদর রয়েছে। পিঠাতে নানা রকমের নকশা তৈরি করা এই এলাকায় অতীতকাল থেকেই প্রচলিত।

গ. নকশি পাখা: প্রাচীনকাল থেকেই গ্রীষ্মের দাবদাহে সামান্য বাতাসের জন্য হাতপাখার ব্যবহার চলে আসছে। চাঁদশী ইউনিয়ানের উঃ চাঁদশী গ্রামে এ ধরনের নকশি হাতপাখার মহিলা কারিগর আছে।  এসব হস্ত তৈরী পাখাগুলো গৌরনদী উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্য অন্য এস্থানের চাহিধা মিটিয়ে থাকে ।    

 যে সব সরকারী সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা গৌরনদী  উপজেলায় কাজ করছে সেগুলো হলোঃ

 

লোকসাহিত্য

 

বরিশাল জেলার লোকসাহিত্যের কতিপয় উপাদান সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন করা হলো:

ক. পুঁথি: লোকসাহিত্যের অন্যতম শাখা হিসেবে পুঁথি-সাহিত্যকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখানকার বিখ্যাত পুঁথিসমূহের মধ্যে গুনাই বিবি, রসুলের মেরাজ গমন, ইউসুফ-জোলেখা ইত্যাদি অন্যতম।

খ. প্রবাদ-প্রবচন: বরিশাল অঞ্চলের অধিবাসীদের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পরিহাসপ্রিয়তা। আর এই বৈশিষ্ট্যের কারণে অনেক সময়ে তারা অভিজ্ঞতাজাত জ্ঞানকে প্রবাদ-প্রবচনের মাধ্যমে ব্যঙ্গার্থে প্রকাশ করে থাকে। বরিশাল অঞ্চলে ব্যবহৃত এ ধরনের কতিপয় প্রবাদ-প্রবচনের হলো:

পোলানষ্ট হাডে, ঝিনষ্ট ঘাডে

দরবারেঠাঁই নাই, বাড়িআইয়া মাগ কিলাই

গ. সিমিস্যা/শোলক: আবহমানকাল থেকে ধাঁ-ধাঁ বুদ্ধির খেলা হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে আছে। বরিশালের গ্রামাঞ্চলের সর্বত্র এই ধাঁ-ধাঁকে সিমিস্যা বা শোলক বলা হয়। এখানে কয়েকটি শোলক উত্তরসহ উল্লেখ করা হলো:

আল্লারকি কুদরত, লাঠিরমধ্যে শরবত(আখ)

একহাত গাছটা, ফলধরে পাঁচটা(হাত)

লোকসঙ্গীত

 

লোকসঙ্গীতের যে সকল শাখা-প্রশাখায় এই অঞ্চল সমৃদ্ধ তার সামান্য পরিচিতি দেয়া হলো:

ক. সারি: সাধারণত সারিবদ্ধভাবে যে সঙ্গীত সমবেতভাবে পাওয়া হয়, সেই সঙ্গীতকেই সারি গান বলা হয়। নৌকাবাইচের সময়ে মাঝিরা দাঁড়ের ছন্দময় আওয়াজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যে গান গায়, বরিশাল অঞ্চলে সেটা সারি গান হিসেবে পরিচিত।

খ. জারি: দেশের অন্যান্য এলাকার মতো বৃহত্তর বরিশালে জারি গানের ব্যাপক প্রচলন ও জনপ্রিয়তা রয়েছে। মূলত এই অঞ্চলের মুসলমান সম্প্রদায়ই এই গানের সঙ্গে সম্পৃক্ত। একজন মূল গায়ক এবং তার কয়েকজন সহযোগী কর্তৃক জারি গান পরিবেশিত হয়ে থাকে।

গ. ভাটিয়ালি: ভাটি অঞ্চলের গান হিসেবেই ভাটিয়ালি গানের ব্যাপক পরিচিতি। আর সে কারণে বরিশাল অঞ্চলে এই গানের ব্যাপক প্রচলন রয়েছে। নি:সঙ্গ নির্জন নদী-পথে নৌকার মাঝির একাকীত্ব দূরীকরণের গানই ভাটিয়ালি।

ঘ. যাত্রা: প্রাচীনকাল থেকেই এ অঞ্চলে যাত্রাপালা নামের বিশেষ ধরনের অভিনয় রীতি প্রচলিত। আঞ্চলিকভাবে ভ্রাম্যমাণ যাত্রাপালা বা গানের দলগুলো বরিশাল অঞ্চলে যুগ যুগ ধরে লোকসংস্কৃতিকে প্রতিনিধিত্ব করে আসছে।

ঙ. হয়লা/সয়লা: লোকসঙ্গীতের অন্যতম ধারা হিসেবে হয়লার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। হয়লা মূলত উৎসবকেন্দ্রিক সঙ্গীত। এই অঞ্চলের হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে হয়লার প্রচলন রয়েছে।

চ. গাজনের গীত: গাজন হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব। বিভিন্ন দেবতাকে কেন্দ্র করে গাজনের গীত রচিত হয়। কারো কারো ধারণা, গাজন প্রকৃতপক্ষে আদিম সমাজের বর্ষা বোধন উৎসব। গাজন উৎসবে যে গান পরিবেশিত হয় তাকেই গাজনের গীত বলে।

ছ. রয়ানী: লোককাহিনীকে ভিত্তি করে রচিত মনসাদেবীর মাহাত্ম্যসূচক সঙ্গীতই মূলত রয়ানী নামে পরিচিত। শ্রাবণ মাসের শেষ সাতদিনে মনসা পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ার সময়ে রয়ানী পরিবেশিত হয়।

 

লোকশিল্প

এখানকার লোকশিল্পের অন্যতম কয়েকটি ধারার পরিচয় দেওয়া হলো:

ক. হোগলা: বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলে হোগলার ব্যবহার অত্যন্ত জনপ্রিয়। পাটি বা চাদরের বিকল্প হিসেবে হোগলা নির্মিত আচ্ছাদনের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে এখানকার সর্বত্র।

খ. কাঁথা: গ্রামীণ মহিলাদের দ্বারা ব্যবহারিক প্রয়োজনে পুরোনো ও ব্যবহৃত শাড়ি বা ধুতিতে নানাবিধ সেলাইয়ের মাধ্যমে কাঁথার উদ্ভব। বরিশাল অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের কাঁথা তৈরি করা হয়ে থাকে।

গ. মৃৎশিল্প: বরিশালের সর্বত্র প্রাচীনকাল থেকেই মাটি নির্মিত বাসন, হাঁড়ি-পাতিল, কলসি, ছাইদানি, ধূপদানি ইত্যাদির ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।

ঘ. শাঁখা: ঐতিহ্যবাহী শাঁখাশিল্পের উৎপত্তি ঠিক কী ভাবে হয়েছিলো তা জানা না গেলেও এর ব্যবহার যে আদিকাল থেকে হয়ে আসছে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। হিন্দু সম্প্রদায়ের মেয়েরাই প্রধানত শাঁখা শিল্পের মূল পৃষ্ঠপোষক।

 


    * শিল্পকলাএকাডেমী,গৌরনদী, বরিশাল ।


   * শিশু একাডেমী,গৌরনদী, বরিশাল ।